মুন্তাখাব হাদিস – একরামে মুসলিমঃ (মুসলমানের মর্যাদা) হাদিস- ৪-৬

হাদিস-৪ (মুসলমানের মর্যাদা)

হযরত আবু হুরইরহ রদিয়াল্লহু আ’নহু (أبىْ هريْرة رضى الله عنْه) বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, দরিদ্ররা ধনীদের আধাদিন পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর ঐ আধা দিনের পরিমাণ পাঁচশত বছর হইবে (তিরমিযী)

ফায়দাঃ পূর্ববর্তী হাদীসে বলা হইয়াছে দরিদ্র ধনীদের তুলনায় পাঁচশত বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। ইহা হইল ঐ অবস্থায় যখন ধনী ও দরিদ্র উভয়ের মধ্যে মালের আগ্রহ থাকে। আর এই হাদীসে বলা হইয়াছে পাঁচশত বছর আগে জান্নাতে যাইবে–ইহা ঐ অবস্থায় যখন দরিদ্রদের মধ্যে মালের আগ্রহ থাকিবে না। (জামেউল উসূল, ইবনে আছীর)

মুন্তাখাব হাদিস (জানুয়ারী ২০০২) পৃষ্ঠা ৫১৩

হাদিস-৫ (মুসলমানের মর্যাদা)

হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে আ’মর রদিয়াল্লহু আ’নহুমা (عبْد الله بنْ عمْرو رضى الله عنْهما) হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, কিয়ামাতের দিন যখন তোমরা জমা হইবে তখন ঘোষণা করা হইবে যে, এই উম্মতের দরিদ্র ও গরীব লোকেরা কোথায়? (এই ঘোষণার পর) তাহারা দাঁড়াইয়া যাইবে। অতঃপর তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করা হইবে, তোমরা কি আমাল করিয়াছিলে?

তাহারা বলিবে হে আমাদের হে আমাদের রব! আপনি আমাদিগকে পরীক্ষা করিয়াছেন আমরা সবর করিয়াছি; আপনি আমাদের ব্যতীত অন্য লোকদের মাল ও রাজত্ব দান করিয়াছেন। আল্লহ তায়া’লা বলিবেন তোমরা সত্য বলিতেছ। নবী করীম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, সুতরাং ঐ সমস্ত লোক সাধারণ লোকদের আগে জান্নাতে দাখিল হইয়া যাইবে আর হিসাব কিতাবের কঠোরতা মালদার ও শাসকদের জন্য থাকিয়া যাইবে। (ইবনে হিব্বান)

মুন্তাখাব হাদিস (জানুয়ারী ২০০২) পৃষ্ঠা ৫১৩

হাদিস-৬ (মুসলমানের মর্যাদা)

হযরত আ’ব্দুল্লহ ইবনে আ’মর রদিয়াল্লহু আ’নহুমা (عبْد الله بنْ عمْرو رضى الله عنْهما) হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, তোমরা কি জান যে, আল্লহ তায়া’লার মাখলুকের মধ্যে হইতে সর্বপ্রথম কাহারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে? সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম আরজ করিলেন, আল্লহ তায়া’লা ও তাঁহার রসূলই অধিক জানেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিলেন যে সমস্ত লোক সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করিবে তাঁহারা হইল দরিদ্র মুহাজিরগণ।

যাহাদের মাধ্যমে সীমান্ত রক্ষা করা হয়, কঠিন ও কষ্টকর কাজে (তাহাদিগকে সম্মুখে রাখিয়া) তাহাদের মাধ্যমে আত্ম্ররক্ষা করা হয়। তাহাদের মধ্যে যাহার মৃত্যু আসে (সে এমন অবস্থায় মারা যায় যে) তাহার আশা আকংখা তাহার অন্তরেই থাকিয়া যায়। যে আশা সে পূরণ করিতে পারে না। আল্লহ তায়া’লা (কিয়ামাতের দিন) ফেরেশতাদের মধ্য হইতে যাহাকে ইছা আদেশ করিবেন, তোমরা তাহাদের নিকটে যাও এবং তাহাদিগকে সালাম দাও। ফেরেশতারা (আশ্চর্য হইয়া) আরজ করিবেন, হে আমাদের রব! আমরাতো আপনার আসমানের অধিবাসী ও আপনার শ্রেষ্ঠ মাখলুক, (ইহা সত্ত্বেও) তাহাদিগকে সালাম করিবার আদেশ করিতেছেন (ইহার কারণ কি)?

আল্লহ তায়া’লা বলিবেন (ইহার কারণ হইল) ইহারা আমার এমন বান্দা ছিল যাহারা একমাত্র আমারই ইবাদাত করিত, আমার সহিত অন্য কাহাকেও শরিক করিত না, তাহাদের মাধ্যমেই সীমান্ত রক্ষা করা হইত, মুশকিল কাজে (তাহাদিগকে সম্মুখে রাখিয়া) তাহাদের মাধ্যমেই অপছন্দনীয় হইতে আত্ম্ররক্ষার কাজ লওয়া হইত। তাহাদের মধ্যে যাহার মৃত্যু আসিত তাহার মনের আশা মনেই রহিয়া যাইত; সে উহা পূরণ করিতে পারিত না।  রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিলেন, তখন ফেরেশতারা তাহাদের নিকট প্রত্যেক দরজা দিয়া এই কথা বলিতে বলিতে প্রবেশ করিবে যে, তোমাদের সবর করার কারণে তোমাদের প্রতি সালাম ও শান্তি বর্যিত হউক। এই জগতে তোমাদের পরিনাম কতই না উত্তম! (ইবনে হিব্বান)

মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব, জানুয়ারী ২০০২) পৃষ্ঠা ৫১৫-৫১৬